আচার্য যদুনাথ সরকার স্মৃতি কর্ণার

প্রখ্যাত বহুভাষাবিদ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রথম অধ্যাপক ভিসি স্যার যদুনাথ সরকারের স্মৃতি বিজড়িত আদি নিবাসে রাণীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে একটি আলোকবর্তিকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এমন স্বনামধন্য বাঙালি ইতিহাসবিদের জীবনী জানার মাধ্যমে ইতিহাস-চর্চায় শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা জোগাতে রাণীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে আচার্য যদুনাথ সরকার স্মৃতি কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের স্মৃতি বিজড়িত পুরাতন দোতালা ভবনটি একসময় লাইব্রেরি (বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে রাজশাহীর প্রথম লাইব্রেরী) হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভবনটি। ফলে পরবর্তীতে তৎকালীন ডিসি মহোদয়ের অনুমতি সাপেক্ষ্যে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে জরাজীর্ণ ভবনটি অপসারন করা হয়। প্রতিবছর বিদ্যালয়ে আচার্য যদুনাথ সরকারের স্মৃতি স্মরণে জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
জন্ম: যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার (বর্তমান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়ন) কড়চমারিয়া গ্রামে৷
পরিবার: পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবীর ৭ পুত্র এবং ৩ কন্যার মধ্যে তিনি ৫ম সন্তান, ৩য় পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকার। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসে ছিল গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজে তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়া সাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এই বিষয়াদি যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তাঁর পরিচয় হয়েছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘হিস্ট্রি অব ইংল্যান্ড’ নামীয় গ্রন্থের সঙ্গে। রাজকুমার সরকার পুত্রের হাতে প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান নায়কদের জীবনী তুলে দিয়েছিলেন। পিতাই তাঁর কিশোর চিত্তে ইতিহাসের নেশা জাগিয়ে দিয়েছিলেন।
শিক্ষা জীবন: গ্রামের স্কুলে তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। তারপর অধ্যয়ন করেছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর গন্তব্য কোলকাতার হেয়ার স্কুল ও সিটি কলেজিয়েট স্কুল। পরে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন প্রথম শ্রেণীতে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে ১ম বিভাগে দশম স্থান অধিকার করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে।পরবর্তী গন্তব্য কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ। থাকতেন ইডেন হোস্টেলে। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইতিহাস ও ইংরেজি সাহিত্য – এই দুটি বিষয়ে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন এবং ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে ৯০% নম্বর নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন৷ ১৮৯৭ সালে তিনি ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ’ স্কলারশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্বর্ণপদকসহ দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন৷

কর্মজীবন: অধ্যাপনার মাধ্যমে ১৮৯৮ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে তার প্রথম কর্মস্থল নির্ধারিত হয়। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজে বদলী হয়ে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। মাঝখানে কিছুকাল ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কাটে পাটনা ও কটকে। ৪ আগস্ট, ১৯২৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে মনোনীত হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম অধ্যাপক ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন তিনি।
প্রবন্ধ রচনা: বাংলায় প্রকাশিত তাঁর প্রবন্ধের সংখ্যা ১৪৮টি এবং ইংরেজিতে প্রকাশিত প্রবন্ধ ৩৬৫ টি।
উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন, নাটোরের মহারাণী ভবানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানত ও বওনীতিমালা ইত্যাদি।
পুরুস্কার ও সম্মাননা: যদুনাথ সরকার তার প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন।
✅ ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করেন।
✅১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৪৪ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় ডি.লিট উপাধি প্রদান করে।
আচার্য পদবী: ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণায় যদুনাথ সরকার পথিকৃৎ বা পথ প্রদর্শক ছিলেন। এই কারণে দেশবাসী তাকে আচার্য হিসাবে বরণ করেছিলেন।
মৃত্যু: আচার্য যদুনাথ সরকার ৮৮ বৎসর বয়সে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে তারিখে কলকাতায় পরলোকগমন করেন।

প্রকাশিত খবর

Scroll to Top